কোটি টাকাসহ আটক মো. ওয়াসিম কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সার্ভেয়ার।
ঘুষের কোটি টাকাসহ কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার এক সার্ভেয়ারকে আটক করেছে র্যাব-১৫। বুধবার বিকেলে কক্সবাজার শহরের বাহারছরা বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। এসময় অন্য দুই সার্ভেয়ার পালিয়ে যায়। তার কাছ থেকে টাকা ছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংকের একাধিক চেক ও সরকারি বিভিন্ন নথিপত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
আটক মো. ওয়াসিম কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সার্ভেয়ার। অভিযানের সময় পালিয়ে যাওয়া অন্য দুই সার্ভেয়ার হলেন মো. ফরিদ ও মো. ফেরদৌস।
বুধবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কক্সবাজার শহরের বাহারছড়া ও তারাবনিয়ারছড়া এলাকায় এ অভিযান চালানো হয় বলে জানিয়েছেন র্যাব-১৫ রামুর কোম্পানি অধিনায়ক মেজর মেহেদী হাসান।
মেজর মেহেদী হাসান বলেন, কক্সবাজারে সরকারের অর্ধ শতাধিক মেগা-প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এসব উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য সরকারের ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম চলমান। এ ভূমি অধিগ্রহণকে ঘিরে সংঘবদ্ধ একটি চক্র জমির মালিকদের বিভিন্ন উপায়ে জিন্মি করে বড় অংকের টাকা আদায়ের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ভূক্তভোগী বেশ কয়েকজন জমির মালিক র্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃংখলা বাহিনীর কাছে লিখিত অভিযোগ করে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাবের একটি দল বুধবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়।
তিনি বলেন, অভিযানে ঘুষের ৯৩ লাখেরও বেশি টাকাসহ একজনকে আটক সম্ভব হলেও অন্য দুইজন পালিয়ে যায়। এসময় বিভিন্ন ব্যাংকের অনুকূলে বেশ কয়েকটি চেক ও নথিপত্রও উদ্ধার করা হয়েছে।র্যাব কর্মকর্তা মেহেদী বলেন, কক্সবাজার শহরের তারাবনিয়ারছড়া এলাকার একটি বাসা থেকে নগদ ৬ লাখ টাকাসহ জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সার্ভেয়ার মো. ওয়াসিমকে আটক করা হয়।
এছাড়া বাহারছড়া বাজার এলাকায় সার্ভেয়ার মো. ফরিদের বাসা থেকে নগদ ৬০ লাখ টাকার বেশি এবং মো. ফেরদৌসের বাসা থেকে ৬ লাখ টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হলেও র্যাবের উপস্থিতির টের পেয়ে তারা পালিয়ে যায়। অভিযান এখনো অব্যাহত রয়েছে।
আটক ওয়াসিমের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে কক্সবাজার সদর থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান মেজর মেহেদী হাসান।
ভুক্তভোগীদের মতে, শুধু এরাই নয়, এলএ অফিসের সিংহভাগ সার্ভেয়ার, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নানা কায়দায় সাধারণ মানুষদের জিম্মি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। যার একটি অংশ এলআর ফান্ডেও যায় বলে জেলার শীর্ষ কর্মকর্তার কাছে গিয়েও কোনো প্রতিকার মেলে না। বাধ্য হয়ে দালাল ও সার্ভেয়ারের দারস্থ হতে হয় ভূমি মালিকদের। ফলে ২০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন দিতে হয় জমির মালিকদের। অনেক ক্ষেত্রে দালালদের সাথে চিহ্নিত কয়েকজন ‘সাংবাদিক’ও এসব কমিশন বাণিজ্যে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।
এদিকে মেগা-প্রকল্প চালুর পর ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) রুহুল আমিন, এডিসি জাফর আলমসহ বেশ কয়েকজন সার্ভেয়ার কারাভোগ করেছেন। সম্প্রতি বর্তমান ডিসিসহ বেশ কয়েকজনের নামে দুর্নীতির অভিযোগে আদালতে মামলা করেছিলেন মহেশখালীর একজন ভুক্তভোগী।
অবশ্য আদালত তা খারিজ করে দিয়েছেন। এর কয়েকদিন পরেই বুধবার র্যাবের অভিযানে ঘুষের নগদ প্রায় কোটি টাকাসহ সার্ভেয়ার আটকের ঘটনা ঘটলো।
এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, একটু আগে জেনেছি আমার অফিসের এক সার্ভেয়ার বেশ কিছু টাকাসহ গ্রেফতার হয়েছে। এটা তার ব্যক্তিগত অপরাধ। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। প্রশাসনিকভাবে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এলআর ফান্ড ও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো সত্য নয় দাবি করে জেলা প্রশাসক আরও বলেন, চেকগুলো কনফারেন্স রুমে উপকারভোগীদের ডেকে হস্তান্তর করা হয়। সে সময় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় কোথাও হয়রানির শিকার হয়েছে কি না। কিন্তু কেউ অভিযোগ না করলে ব্যবস্থা নেয়া যায় না। এতে অপকর্মগুলোও সবসময় আড়ালেই থেকে যায়। কারো এমন অপরাধ সামনে আসলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পিছপা হবো না।